সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হোকের পরানের গহীন ভিতর এমন এক আশ্চর্য কাব্যগ্রন্থ, বাংলাদেশের কবিতায় যা এর মধ্যেই ধ্রুপদি মর্যাদা লাভ করেছে। পূর্ব বাংলার মানুষের মুখের ভাষার যে সুমিষ্ট-সহজ অভিব্যক্তি, এ বইয়ের পঙক্তিতে তা সপ্রাণ হয়ে উঠেছে কাব্যের অপূর্ব জাদুর কাঠিতে। এতে আছে আমাদের আত্মপরিচয়ের প্রত্নচিহ্নও। কাম-বিরহ, কামতৃষ্ণা, বিচ্ছেদ-বেদনা- প্রবৃত্তির সবটুকু সারাৎসার ধারণ করে কালজয়ী বইটির খণ্ড খণ্ড কবিতাগুলো সবার সামনে উন্মোচন করে মানুষের ভালোবাসার অখণ্ড স্বরূপ।
'মানুষ এমন তয়, একবার পাইবার পর
নিতান্ত মাটি মনে হয় তার সোনার মোহর।' - উন্মাতাল সেই ভুবনে, সাবলীল কবিতার জগতে পাঠককে স্বাগত। সৈয়দ শামসুল হোকের শোভিত চিত্রণ হয়ে বইটি এবার প্রকাশিত হলো নতুন এক অনিন্দ্য ব্যঞ্জনায়।
বাঙালির সমন্বিত সংস্কৃতি ও ঐক্যবদ্ধ জাতীয়তা গড়ে ওঠার পথের সমস্যা বা অন্তরায়, সাতচল্লিশের দেশভাগের পেছনের অজানা বা কমজানা নানা ঘটনা ও কারণ, শেরে বাংলা ও সোহরাওয়ার্দী আমাদের এই দুই জাতীয় নেতার রাজনৈতিক ভূমিকার মূল্যায়ন, ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের অতুলনীয় দেশপ্রেম, মোতাহের হোসেন চৌধুরীর সংস্কৃতিচিন্তার বিশদ পরিচয়, বুদ্ধিজীবী হিসেবে মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী ও আনিসুজ্জামানের অনন্যতা ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ে মোট বিশটি প্রবন্ধের সংকলন এ বইটি। প্রতিষ্ঠিত বা বহুলপ্রচারিত ধারণার বিপরীতে তথ্য ও যুক্তির আলোকে কিছু বিষয়কে নতুনভাবে যাচাই ও মূল্যায়ন করতে চেয়েছেন লেখক গ্রন্থভুক্ত প্রবন্ধগুলোতে। পাঠকের সাধারণ কৌতূহল মেটানোর পাশাপাশি তাঁদেরকে যা নতুন জিজ্ঞাসারও মুখোমুখি করবে। নিরাসক্ত বিচার এবং তথ্য ও যুক্তিনিষ্ঠ বক্তব্যের অতিরিক্ত লেখকের সহজ-সরল কিন্তু শাণিত ভাষা বইটির এক বাড়তি আকর্ষণ।
রূপকথার ভুবনে থাকে ভালো-মন্দের চিরকালীন দ্বন্দ্ব; মন্দকে হারিয়ে শেষে শুভ, সত্য ও কল্যাণের জয়। ১৭টি দেশের রূপকথা নিয়ে সাজানো এ বই পাঠকের মধ্যে নৈতিক শিক্ষা ও মূল্যবোধ জাগিয়ে তুলতে বিশেষ সহায়ক হবে। বর্তমান সময়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অনেক অনেক দূর এগিয়ে গেছে। রকমারি ইলেকট্রনিক ডিভাইসের প্রচলন, সমাদর ও ব্যবহার পুরোনো অনেক কিছুকে নিয়ত পেছনে ঠেলে দিচ্ছে। তারপরও রূপকথার আবেদন কিন্তু কমেনি। তার মূল্য ও গুরুত্ব চিরন্তন। ছোটবেলায় মা-বোন, খালা-ফুফু, দাদি-নানি ও অন্য মুরব্বিজনের মুখে শোনা রূপকথার গল্প শিশুর কচি মনে কল্পনা ও সৃজনীশক্তির উন্মেষ ঘটায়। প্রজন্মান্তরে এই প্রক্রিয়া বহমান থাকে। এ বইয়ে রয়েছে ১৭টি দেশের ১৭টি বাছাই করা রূপকথা। গল্পগুলো বাছাই করা হয়েছে খুব সতর্কতা ও যত্নের সঙ্গে। একেকটি গল্প একেক রকম বৈশিষ্ট্যে, দীপ্তিতে অনন্য। প্রতিটি গল্পেই কাহিনির আবরণে লুকানো আছে নৈতিক শিক্ষা ও মূল্যবোধের রত্নদীপ। পাঠকের মনকে যা আলোকিত ও তার চেতনাকে সমৃদ্ধ করবে।
লাভ লেন শব্দ দুটি ব্রিটিশদের দেওয়া। এই লাভ লেনের একটি বাড়ি ঘিরে উপন্যাসটির কাহিনিবৃত্ত। মানুষের জীবনে প্রেম মহার্ঘ। তারপরও কেন নর-নারীকে অপ্রেমের সঙ্গে জীবন কাটাতে হয়? এই প্রশ্নটির উত্তর খোঁজা হয়েছে এই উপন্যাসে। নাম দেখে মনে হবে, এ বুঝি এক প্রেমের উপন্যাস। আসলে এটি এক অপ্রেমের বৃত্তান্ত। বাদামি-জীবন আমাদের। এক খোসার ভেতর দুটো আলাদা ঘরে দুটো বাদাম। আমাদের দাম্পত্যজীবনও ঠিক বাদামের মতন। এক ঘরে এক বিছানায় শুয়েও আলাদা জীবন আমাদের। কাকে যেন পাওয়ার ছিল, কে যেন অধরা থেকে গেল! তিশা সিরাজের সঙ্গে ঘর বাঁধতে চেয়েছিল, পারেনি। লম্বা বেঢপ চেহারার নিখিল ভৌমিকের সঙ্গে রূপসী তিশাকে সংসার করতে হলো। ভালোবেসে বিয়ে করেছিল জয়দীপ। দাম্পত্যজীবনটা সুখকর ছিল না। এই উপন্যাসের শরীরজুড়ে না পাওয়ার ক্ষতচিহ্ন। স্নিগ্ধমধুর এক স্বপ্ন শেষ পর্যন্ত বেঁচে থাকে ‘১৬/১৭ লাভ লেনে’।
নির্মলেন্দু গুণের হার্ট অ্যাটাক হলো। সামাদ ভাই বললেন, ‘গুণদা, বাইরে তো ভিড় হয়ে গেছে। টেলিভিশনের বহু ক্যামেরা এসে গেছে।’ হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে তিনি বললেন, ‘আমি তো এঁদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারব না। আমি তো মারা যাব না।’ কবি-সাহিত্যিকেরা বেশির ভাগই মজার মানুষ। হুমায়ূন আহমেদ, আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ কিংবা নির্মলেন্দু গুণের রসবোধের কোনো তুলনা হয় না। তাঁদের রসিকতাগুলো দেশবিখ্যাত এবং চিরন্তন আনন্দ ও শিক্ষার উত্স। আবার রসবোধে খ্যাতি তেমন নেই, এমন মানুষও ঘটিয়ে থাকেন মজার মজার ঘটনা। শুধু মজার ঘটনা তো নয়, লেখক-কবিদের জীবনে ঘটে অনেক দুঃখের ঘটনা; আর সারাক্ষণই তাঁদের পোড়াতে থাকে শিল্পের আগুন। সমকালীন সাহিত্যের অনেক শ্রেষ্ঠ সাহিত্যিককে কাছে কিংবা দূর থেকে দেখেছেন আনিসুল হক। লেখকদের নিয়ে আনিসুল হকের স্মৃতি, অভিজ্ঞতা, কৌতুক, আনন্দ-বেদনা আর হাহাকারের গল্পগুলো ধরা থাকল এই বইয়ে। এই লেখাগুলো একই সঙ্গে স্মৃতিচারণা, সাহিত্যের উদ্যাপন, লেখকদের প্রতি সম্মান ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ এবং সাহিত্যিক মূল্যায়নের রেখাচিত্র। লেখক পরিচিতি আনিসুল হক জন্ম ৪ মার্চ ১৯৬৫, নীলফামারী। শৈশব ও বাল্যকাল কেটেছে রংপুরে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক। কবিতা, গল্প, উপন্যাস, রম্যরচনা, ভ্রমণকাহিনি, শিশুসাহিত্য—সাহিত্যের নানা শাখায় সক্রিয়। প্রথমা থেকে প্রকাশিত হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং সে সময়ের মানুষদের নিয়ে তাঁর লেখা উপন্যাসের ছয়টি পর্ব—যারা ভোর এনেছিল, উষার দুয়ারে, আলো-আঁধারের যাত্রী, এই পথে আলো জ্বেলে, এখানে থেমো না ও রক্তে আঁকা ভোর। পেয়েছেন বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারসহ বেশ কয়েকটি পুরস্কার। তাঁর বই অনূদিত ও প্রকাশিত হয়েছে দেশ-বিদেশে, বিভিন্ন ভাষায়।
বাধা আসার পরও কীভাবে উঠে দাঁড়ানো যায়, সেটি সব মানুষের জানা উচিত। এজন্য সবার মানসিক যত্ন নেওয়া জরুরি। এই যত্ম কীভাবে নেবেন, সে বিষয়েই এ বই।
আমাদের চারপাশ রহস্যে ভরপুর। এই রহস্যের উন্মোচন করতে চায় বিজ্ঞান। রহস্য এবং রহস্য উন্মোচনের চেষ্টার মোট দশটি বিজ্ঞান কল্পগল্পের সংকলন কিনাবালুর গান।
একদিন সকালে আমজাদ আলী নামের সাধারণ এক দোকানের ম্যানেজার আবিষ্কার করে তার হাতের লেখা, টিপসই, এমনকি রক্তের গ্রুপ পর্যন্ত পাল্টে গেছে। হাওরের জেলে হাসন মিয়ার জালে উঠে আসতে থাকে বিরল প্রজাতির সব মাছ। ওদিকে বাংলাদেশের প্রাণিবিজ্ঞানী নিকিতা গবেষণার কাজে ইন্দোনেশিয়া গিয়ে ভয়ানক বিপদে পড়ে। ভয়ংকর অগ্ন্যুত্পাতের কবল থেকে কিনাবালু পর্বতের আদিবাসীদের সুরক্ষা দেয় প্রকৃতি। এসব রহস্য ও তার শিহরণ জাগানো ব্যাখ্যা নিয়ে বিজ্ঞান কল্পগল্পের এ বই।
১৯৭১ সালের মার্চে পাকিস্তানে সাংবিধানিক গণতন্ত্রের সম্ভাবন শরুতেই মুখ থুবড়ে পড়ে। সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা শেখ মুজিবুর রহমান অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন। সামরিক সরকার অচল হয়ে যায়। শুরু হয় লোক দেখানো সংলাপ। একপর্যায়ে সেটিও ভেঙে পড়ে। ২৫ মার্চ রাতে বাঙালির ওপর পাকিস্তানের সামরিক অভিযান ও গণহত্যা শুরু হয়। তাৎক্ষণিক ভাবে আরম্ভ হয় বাঙালির প্রতিরোধ যুদ্ধ। ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে শেখ মুজিব গ্রেপ্তার হন। সংক্ষেপে এটাই এ বইয়ের পটভূমি।
শেখ মুজিব পাকিস্তানের বন্দি দশা থেকে মুক্ত হয়ে লন্ডনে যান বাহাত্তরের ৮ জানুয়ারি। সেখানে ছিলেন ২৬ ঘন্টা। পেয়েছিলেন রাষ্ট্র প্রধানের মর্যাদা। ১০ জানুয়ারি তিনি নয়াদিল্লি হয়ে ঢাকায় ফিরে এলে বীরের সম্মান পান। এই সাড়ে ৯ মাসে ঘটে গেছে ইতিহাসের বিরাট পালাবদল। একাত্তরের মার্চ থেকে বাহাত্তরের জানুয়ারি পর্যন্ত ঘটনাবহুল পর্বটি ঘিরে এ বই। এখানে মূল আখ্যান পাঁচটি– শেখ মুজিবের গ্রেপ্তার, বন্দিজীবন ও বিচার, মুক্তি, লন্ডন ও দিল্লিপর্ব এবং দেশে ফিরে এসে কঠিন এক বাস্তবতার মুখোমুখি হওয়া।
বিশ্বের বড় ঘটনাগুলোর অন্তরালে থাকে এমন সব ঘটনা, যা সাধারণ মানুষের অজানা থেকে যায়। সেগুলো ঘটে রাষ্ট্রের গোপন তৎপরতার অংশ হিসেবে। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর বাংলাদেশের রাজনীতি এক অস্থির সময় পার করেছে। সে সময় মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো বাংলাদেশ পরিস্থিতি সম্পর্কে তাদের পররাষ্ট্র দপ্তরে যেসব গোপন দলিল পাঠাত, সেগুলো এখন অবমুক্ত। সেনানিবাসে বিএনপির জন্ম বিষয়ে সে সময়ের মার্কিন গোপন দলিল কী বলে? কেমন করে সেনানায়ক জিয়াউর রহমানের হাতে সেনাবাহিনীর রাজনৈতিকীরণ ঘটেছিল? জিয়া হত্যাকাণ্ডের পর কেন ঘন্টায় ঘন্টায় ওয়াশিংটনে বার্তা পাঠাচ্ছিল বাংলাদেশের মার্কিন দূতাবাস? কী ছিল সেসব বার্তার বিষয়? বাংলাদেশের ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ কালপর্ব সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর সেসব তথ্য উদ্ঘাটন ও বিশ্বেষণ করা হয়েছে এ বইয়ে।
কোনো নারীমুখ ট্রেনের জানালায় দেখামাত্রই তার প্রেমে পড়ে যাবে, শহীদুল তেমন নয়। সে থাকে মেসে, লড়াই করে দারিদ্র্যের সঙ্গে, আইনের ছাত্র। প্রেমে পড়া তার পক্ষে অসম্ভব এবং অসংগত। তবু সে ট্রেনের জানালায় দেখা এক তরুণীর প্রেমে পড়েই যায়। তাকে সে অনুসরণ করতে থাকে এবং তার নাম দেয় পারিজাত। অবশেষে সে আবিষ্কার করতে সক্ষম হয় যে মেয়েটি কানে শোনে না, চোখে দেখে না। কী করবে এখন শহীদুল? এই মেয়েটিকেই সে ভালোবাসবে? অন্যদিকে মেয়েটি কী ভাবছে ছেলেটির সম্পর্কে? আর তারা যদি ভালোবেসে বিয়ে করেই ফেলে, তাদের সন্তানেরা কি কথা বলতে পারবে? কানে শুনবে? সত্যিকারের কাহিনি অবলম্বনে রচিত আনিসুল হকের মিষ্টি প্রেমের উপন্যাস, যা আরম্ভ করলে শেষ না করে পারা যায় না। যা মধুর আনন্দে ভরিয়ে দেয় পাঠকের মন।
মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ নামের রাজনৈতিক ভূখণ্ডের অভ্যূদয়। বাংলাদেশকে বুঝতে, তার ভবিষ্যেক নির্মাণ করতে তাই মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের নানা মাত্রাকে নিরন্তর সংরক্ষণ এবং বিশ্লেষণ প্রয়োজন। মুক্তিযুদ্ধের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামরিক দিক নিয়ে চর্চা হলেও তুলনামূলকভাবে অনালোচিত রয়েছে মুক্তিযুদ্ধকালীন চিকিত্সা এবং স্বাস্থ্যবিষয়ক মাত্রাটি। যুদ্ধ সামরিক ও বেসামরিক মানুষকে এক নৃশংস পরিস্থিতির মুখোমুখি করে। মানুষ আহত, নিহত হন, বরণ করেন পঙ্গুত্ব। যুদ্ধকালে বিপদগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য এবং চিকিত্সার ব্যবস্থা তাই যুদ্ধেরই অংশ। মুক্তিযুদ্ধকালের সেই চিকিত্সাযুদ্ধের ইতিহাস সন্ধানই এই বইয়ের লক্ষ্য। দীর্ঘদিনের নিবিড় গবেষণায় শাহাদুজ্জামান ও খায়রুল ইসলাম এ বইয়ে তুলে এনেছেন মুক্তিযুদ্ধের অনালোচিত সেই অধ্যায়। মুক্তিযুদ্ধের চিকিত্সা ইতিহাস গ্রন্থটি মুক্তিযুদ্ধচর্চায় একটি ব্যতিক্রমী সংযোজন।