অসম ভালোবাসায় দাউ দাউ করে জ্বলে বাড়ির চিলেকোঠা। অলিন্দ অনলে পুড়ে যাওয়া চিঠিগুলোয় কেটে যায় সময় নিমগ্ন। হঠাৎ বিভোর করে স্মৃতির পাতায় ছোট্ট তরীর গোধূলী লগ্ন। বিরহ রঙিন করে প্রেমিকের দেয়া একগুচ্ছ বেগুনি ফুল। চোখের জলে ভিজে যায় শাপলার মালা। জল থেকে তুলে আনা ব্যাটে বিশ্বজয় প্রেয়সীর মন জয় করার কী উপায়?'' অলিন্দ অনলে একটি অসম প্রেমের গল্প। প্রেয়সীর প্রতি তীব্র ভালোবাসা নিয়ে কেওয়াটখালী রেলব্রিজে ছুটে চলার গল্প। সীমাহীন অনিশ্চয়তা নিয়েও আশায় বুক বাঁধার গল্প। শেষ পর্যন্ত কি হয় অলিন্দ অনলে পুড়তে থাকা অন্তরার? অলিন্দর গাঢ় কবিতা আর অসম প্রেমের শেষ স্টেশন কোন শহরে?
দেশ ও প্রবাসজীবনের পটভূমিতে লেখা এ উপন্যাসের কাহিনিজুড়ে ব্যাপ্ত রয়েছে বেদনা ও বিরহের সুর। দুটি জীবনের প্রেম-ভালোবাসা, স্বপ্ন-আকাঙ্ক্ষার মাঝে যে শূন্যতা বিরাজ করে, তারই শিল্পিত উন্মোচন বলা যায় উপন্যাসটিকে। মানুষ কি তার স্বপ্নের দিনগুলো সময়ের ফ্রেমে বাঁধতে পারে? এ প্রশ্নেরই উত্তর যেন খুঁজেছেন লেখক এ বইয়ে। পাঠকককে যা ভাবতে বাধ্য করবে। মানুষের জীবনে যেসব অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে, তা অনেক সময় আজীবনের জন্য একটি ছাপ রেখে যায়। তেমনটি ঘটেছে এ উপন্যাসের নায়ক জাভেদ মাহমুদের বেলায়ও। পারিবারিক উদ্যোগে যাঁকে তিনি জীবনসঙ্গিনী করেছিলেন, শেষ পর্যন্ত তাঁর হননি তিনি। শত চেষ্টা করেও জাভেদ মাহমুদ তাঁকে নিজের করে নিতে পারেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেক কিছুর পরিবর্তন ঘটলেও রিমা রহমান তাঁর সিদ্ধান্ত বদলাননি। একসময় সমস্ত বন্ধন থেকে জাভেদ তাঁর স্ত্রী রিমাকে মুক্তি দিলেও জীবনে সুখী হতে পারেননি তিনি। পরিবার ও সমাজে মুখোমুখি হয়েছেন হাজারো প্রশ্নের। অন্যদিকে উপন্যাসের নায়কও জীবনকে নিয়ে দাঁড় করান হতাশার এক বালুচরে। সময়ের প্রেক্ষিতে এমনই একটি উপন্যাস, যাতে দুজন মানুষের সমান্তরাল জীবনবাস্তবতা রূপায়িত হয়েছে। মানুষের চাওয়া-পাওয়ার হিসাব কীভাবে অনেক সময় জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে, তারই এক চিত্র এ উপন্যাস।
কোনো নারীমুখ ট্রেনের জানালায় দেখামাত্রই তার প্রেমে পড়ে যাবে, শহীদুল তেমন নয়। সে থাকে মেসে, লড়াই করে দারিদ্র্যের সঙ্গে, আইনের ছাত্র। প্রেমে পড়া তার পক্ষে অসম্ভব এবং অসংগত। তবু সে ট্রেনের জানালায় দেখা এক তরুণীর প্রেমে পড়েই যায়। তাকে সে অনুসরণ করতে থাকে এবং তার নাম দেয় পারিজাত। অবশেষে সে আবিষ্কার করতে সক্ষম হয় যে মেয়েটি কানে শোনে না, চোখে দেখে না। কী করবে এখন শহীদুল? এই মেয়েটিকেই সে ভালোবাসবে? অন্যদিকে মেয়েটি কী ভাবছে ছেলেটির সম্পর্কে? আর তারা যদি ভালোবেসে বিয়ে করেই ফেলে, তাদের সন্তানেরা কি কথা বলতে পারবে? কানে শুনবে? সত্যিকারের কাহিনি অবলম্বনে রচিত আনিসুল হকের মিষ্টি প্রেমের উপন্যাস, যা আরম্ভ করলে শেষ না করে পারা যায় না। যা মধুর আনন্দে ভরিয়ে দেয় পাঠকের মন।
সিনেমার একটা দল এসেছে আখাউড়ায়। সারা দিন বৃষ্টি, ওপেন করা যাচ্ছে না ক্যামেরা। দলে কোনো নায়ক-নায়িকা নেই। আছে খাঁচায় বন্দী এক ট্রাক কাক। ছবির ডিরেক্টর সুমন। একগুঁয়ে লোক। তার নিজস্ব এক দ্বীপের একমাত্র বাসিন্দা দিপা। চিফ অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর তরুণ।
বেঁটেখাটো মানুষটার জন্মগতভাবে বাঁ পায়ে সমস্যা। সঙ্গে জুটেছে স্থানীয় কিশোর বাবলু। রোগাপটকা বুকে সে স্বপ্ন পুষে রাখে। একপর্যায়ে এ দলে যুক্ত হয় সম্মোহনী শক্তির রহস্যময় এক মানুষ—সুলতান শেখ। আর আছে সুখপাখি, যার দেখা পেলে দুঃখ আর কখনো স্পর্শ করে না।
সুমন, তরুণ আর বাবলু—প্রত্যেকের জীবনই আজব কিছু ঘটনার যোগফল। সেগুলো এতই অদ্ভুত যে বিভ্রম বলে ভুল হয়। তাদের জীবনের পুরোটাই কি স্বপ্ন, নাকি ওরা বাস করছে অন্য কারও স্বপ্নে?
স্বপ্ন ও বাস্তবতার মায়াবী উপাখ্যানে আপনাকে আমন্ত্রণ।
মুক্তিযুদ্ধে জোহরাকে হারিয়েছে তানেস। তারপর পেরিয়ে গেছে ৫০ বছরের বেশি। আজও তানেসের বুকপকেটে সব সময় থাকে জোহরার ছবি ও চিঠি। একজন মুক্তিযোদ্ধার জীবনের সত্য ঘটনা অবলম্বনে লেখা হয়েছে উপন্যাসটি।
১৯৭১ সাল। যুদ্ধের ডাকে সাড়া না দিয়ে থাকতে পারল না তানেস। শুনে কেঁদে বুক ভাসালেও দেশের কথা ভেবে তাকে আটকে রাখেনি জোহরা। যাওয়ার আগে জোহরাকে তানেস কথা দিয়েছিল দেশ স্বাধীন করে তবেই ফিরবে তার কাছে। জোহরাও কথা দিল অপেক্ষা করবে তার জন্য। দেশ স্বাধীন করে ফিরে এল তানেস। কিন্তু পেল না জোহরাকে। পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর হাতে নিহত হয়েছে জোহরা। সেই থেকে তানেস জোহরার ছবি আর চিঠি আঁকড়ে ধরে বেঁচে আছে। এর মধ্যে পেরিয়ে গেছে ৫০ বছরের বেশি সময়। কিন্তু মুহূর্তের জন্য তানেস বুকপকেট থেকে সরিয়ে রাখেনি জোহরার ছবি।
আরতি ও শিব বিয়ে করে হানিমুনে যাচ্ছে। বিমানে তাদের সঙ্গে দেখা হয় দুই বাংলার জনপ্রিয় নায়ক ফেরদৌসের সঙ্গে। তারপর এমন ঘটনা ঘটে, ফেরদৌস যা কল্পনাও করতে পারেননি। এত হাসি, আনন্দ, সুখের মাঝে কী এমন ঘটল, যা ফেরদৌসের মস্তিষ্ককে নাড়িয়ে দিল। জানতে হলে পড়তে হবে এ উপন্যাস।
এটা কি উপন্যাস নাকি আমার জীবনের কথা? আমি জানি না। আমি ভীষণ সংবেদনশীল, বন্ধুপরায়ণ একজন মানুষ। তাই লিখতে গেলে নিজের জীবনের অনেক ঘটনাই চলে আসে। ভেবেছিলাম আরতি আর শিবের ভালোবাসার পরিণতির গল্প লিখব। কিন্তু কীভাবে যেন আমি নিজেও গল্পের ভেতরে ঢুকে পড়লাম। ভ্রমণকাহিনি পড়তে আমার ভীষণ ভালো লাগে। লিখতে চেয়েছিলাম ভ্রমণকাহিনি, হয়ে গেল প্রেমকাহিনি। আমার ভক্ত, দর্শক, পাঠক বন্ধুরা সবাই আমার প্রচণ্ড ভালোবাসার। এই ভালোবাসার মানুষেরা দুই দশকের অধিক সময় ধরে আমার অভিনয় সহ্য করেছেন। আশা করি, মাঝে মাঝে আমার কষ্টের এই লেখাগুলোও পড়বেন। আমি আনন্দিত হব।
"নারী পুরুষের মধ্যকার কেমিস্ট্রি বা রসায়নের ব্যাপারটা মনে হয় বেশ জটিল। সুমির যখন বিয়ে হয়েছিল তখন ওর বিশ বছর বয়স। হবু বর আবেদকে দেখে একটুও আকৃষ্ট হয়নি ও। কিন্তু আবেদের সুমিকে অনেক ভালো লেগেছিল। তারপর সেই একপক্ষের আকর্ষণের ওপর ভিত্তি করে সুমির বিয়ে আর চব্বিশ বছরের সংসার। দুই কন্যা, এক পুত্র আর স্বামীকে নিয়ে প্রবাসের একেবারে হিমহাম আদর্শ সংসার।
এতগুলো বছরে সুমির মনে হয়েছে শরীরের আনন্দের চেয়ে জীবনে আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার আছে স্বামী আবেদের সাথে তার সম্পর্ক শরীরের আকর্ষণ বা রসায়নের সমীকরণে বাঁধা না। এই সম্পর্ক সম্মান, ভালোবাসা, বিশ্বাসের তারে বাঁধা। কিন্তু সুমির এতদিনের ধারণার শক্ত ভিতে হঠাৎ করেই নাড়া দেয় তার বড় মেয়ে নাবিলা। যে কি না সুমির চোখে পৃথিবীর সবচেয়ে আদর্শ এবং বাধ্যগত মেয়ে।
যুক্তরাজ্যের পটভূমিকায় লেখা “হৃদয়ের রসায়ন” উপন্যাস করোনা অতিমারীর সময় সুনির সংসারের পাঁচজনের জীবনের গল্প। ছিমছাম সাজানো সংসারটা কেমন করে আকস্মিক ঝড়ের কবলে পড়ে, সেই গল্প সর্বোপরি মা এবং মেয়ের হৃদয়ের রসায়নের গল্প।
মৌরি মরিয়ম বর্তমান বাঙালি লেখক সমাজে জনপ্রিয় এক নাম মৌরি মরিয়ম। ১৯৯১ সালের ২৫ মে বরিশালের গৌরনদী উপজেলায় মৌরি মরিয়ম জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা মরহুম আজিজুল হক এবং মা মনজু বেগম। তিনি বেড়ে উঠেছেন রাজধানী ঢাকার শহরঞ্চলে। ধানমন্ডি গার্লস স্কুল থেকে ২০০৯ সালে মাধ্যমিক এবং বদরুন্নেসা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন ২০১১ সালে। ২০১৫ সালে ঢাকার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতা বিভাগে তিনি স্নাতক সম্পন্ন করেন। শৈশবকাল থেকেই বই পড়ার অভ্যাস গড়ে ওঠে মৌরির। লেখাপড়ার পাশাপাশি নিয়মিত গল্পের বই পড়তেন তিনি। বইয়ের প্রতি ভালোবাসা থেকেই লেখালেখিতে মনোনিবেশ তার। তার লেখক প্রতিভা জাগ্রত হয় স্কুলের ম্যাগাজিনে গল্প-কবিতা লেখার মধ্য দিয়ে। সেই থেকেই লেখক সত্ত্বাকে জিইয়ে রেখেছেন মৌরি। ছাত্রজীবনে লেখক হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে রচনা করেছেন ৪-৫টি উপন্যাস। তিনি আত্মপ্রকাশ করেন ২০১৮ সালে। মৌরি মরিয়ম এর উপন্যাস ‘প্রেমাতাল’ ২০১৮ সালের বইমেলায় প্রকাশিত হয়। ঠিক এর পরের বছর ২০১৯ সালের বইমেলায় তিনি উপহার দেন তার দ্বিতীয় উপন্যাস ‘অভিমানিনী’। ‘তোমায় হৃদমাঝারে রাখব’ তার প্রকাশিত তৃতীয় উপন্যাস। এরপর মৌরি মরিয়ম এর বই সমগ্র এর মধ্যে আরও আছে ‘সুখী বিবাহিত ব্যাচেলর’। খুব অল্প সময়ে মাত্র ৪টি উপন্যাস দিয়ে তিনি পাঠকের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন। মৌরি মরিয়ম এর বই সমূহ পাঠককূল আগ্রহভরে পড়ে। শত ব্যস্ততার মধ্যেও লেখালেখির জন্য সময় তিনি বের করেই নেন, কেননা বই লেখা মৌরি মরিয়মের নেশা। সারাজীবন তিনি লেখালেখির মধ্যেই থাকতে চান।
যে বাড়িটা একসময় গৃহস্থালি কাজে সারাদিনমান কোলাহলমুখর থাকত, সে বাড়িটা ধীরে ধীরে নিজেদের পুরোদস্তুর গার্হস্থ্য জীবন গুটিয়ে নিল। যে বাড়িতে ছুটির মৌসুমে ঘর ভরে যেত মেহমানে, মাটিতে শীতলপাটি বিছিয়ে শয্যা পাততে হতো জায়গা সংকুলান না হওয়ায়, সেই বাড়িতে এখন মানুষের পায়ের চিহ্ন পড়ে না বছরের পর বছর। যে বাড়িতে প্রায় উনিশ-কুড়িটা জানালা দিয়ে রোজ সূর্যের আলো প্রবেশ করত ঘরে, সন্ধ্যে হলে নাকবারান্দায় জ্বলে উঠত বৈদ্যুতিক আলো, সেই বাড়িজুড়ে এখন থইথই অতল অন্ধকার। পৌষের মধ্যরাত পর্যন্ত যে বাড়ির উনুনঘরে পিঠাপুলি বানানো হতো, সেই উনুনঘর থেকে এখন আর পিঠাপুলির গন্ধ ভেসে আসে না। বছর যায়, ক্যালেন্ডার বদলায়, একের পর এক পৌষ মাস এসে চলেও যায়, কিন্তু সেই উনুন ঘরের বন্ধ দরজাটা আর খুলে না। ঋতুবদলের ঘূর্ণিপাকে প্রকৃতিতে বর্ষা আসে, পদ্মা নদী যুবতী হয়ে উঠে, চরাচর ভেসে যায় উচ্ছ্বল পানিতে। ঐ বাড়ির উঠোনেও পানি জমে, বহির্বাটি দিয়ে স্রোত আপন গতিতে চলে যায় মাঠে-ঘাটে। কিন্তু এখন আর কেউ ঘরে পানি উঠে যাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তা করে না সেখানে। কেউ দক্ষিণের জানালা খুলে দেখে না, পানি কতটুকু বাড়ল বা কমল। প্রতি পূর্ণিমায় ঐ বাড়ির টিনের চালাতেও জ্যোত্স্না আছড়ে পড়ে। কিন্তু উঠোনে মাদুর বিছিয়ে জ্যোৎস্না দেখে না কেউ আর। বাড়ির কোল ঘেঁষে কারো কল্পনায় অনাথের মতো একা দাঁড়িয়ে থাকে নিঃসঙ্গ শিমুল গাছ। সেই গাছজুড়ে ফুটে থাকে লাল টুকটুকে শিমুল ফুল। শিশিরের মতো টুপটাপ শব্দে তা ঝরে পড়ে। কিন্তু কোচর ভরে সেই শিমুল ফুল কুড়িয়ে নেওয়ার মতো কেউ নেই আর। তবুও বাড়িটা অপেক্ষায় থাকে । আপনজনের ফিরে আসার অপেক্ষায়! প্রচ্ছদ: মো: সাদিতউজজামান
বাস্তবতার চরম নিরিখে পৃথিবীতে কিছু কিছু মানুষ না পাওয়ার দলে পরে যায়। তাঁরা ভীষণ ভালো মানুষ হওয়া সত্ত্বেও বিধাতা কেন জানি তাঁদের সবকিছু থেকে বঞ্চিত করে রাখেন। তাঁরা কারো ভালোবাসা পায় না, বন্ধু পায় না, মৌলিক চাহিদাটুকু পায় না, কান্না করার জন্য নিজের একটা ঘর পায় না, বর পায় না, সংসারও পায় না। পায়না একটা সন্ধ্যামণি ফুলও! শুধু না পাওয়ার স্রোতে ভাসতে থাকে ঘনকৃষ্ণ অন্ধকারে। আহা কি দ্বন্দ্ব ও দ্যোতনার এই দুর্বর্ণ জীবন।
"উপন্যাস সাহিত্যের আদি অন্যতম প্রধান শাখা। ধারণা করা হয়, যখন পৃথিবীর কোনো অক্ষর জ্ঞান ছিলো না, তখনও মানুষের ভাবনায় উচ্চারণে নানামুখী জীবনের অব্যক্ত গল্প ভাবনা থাকতো । কবিতার মতো উপন্যাস খুব একটা ঋতু বদল করেনি। তবে আধুনিক উপন্যাসের ধরণ খানিকটা বদলেছে বলা চলে । কারণ আগে উপন্যাসের বিষয়বস্তু এবং সব গুলো চরিত্র গল্পাকারে এক সাথে লিখা হতো। তবে আগের ধারাকে ঠিক রেখে এখন আধুনিক লেখকরা সিনেমাটিক ওয়েতে প্রতিটি চরিত্রকে ভাগ ভাগ করে সাজিয়ে থাকেন পুরো গল্পটায়।
‘কাগজের পুরুষ' কাব্য-উপন্যাসটিও ঠিক তেমনভাবেই লিখা। এতে এমন কিছু চিত্র তুলে ধরা হয়েছে বর্তমান সমসাময়িক বিষয়কে ঘিরে যার ৮০ শতাংশই সত্য। একজন যৌন কর্মীর জীবনকে তিন ভাগে তুলে এনেছেন লেখিকা এখানে। শতভাগ সত্যতা ফুটিয়ে তুলতে লেখিকা নিজে পতিতালয়ে দুই দিন এক রাত থেকেছেন সেই সব নারীদের মাঝে । সমাজ পতিতা বা প্রস্টিটিউট তাদের বলে যারা শুধু তিন বেলা পরিবারের কিছু মানুষকে ভাতের গন্ধ দেয়ায় এই পেশা বেছে নেন। কিন্তু সত্যিকারের কর্পোরেট প্রস্টিটিউট আমাদের সকলের আশেপাশে শতশত । যাঁরা মেধাকে ব্যবহার না করে শর্টকাটে উপরে উঠতে শরীরকে পূঁজি করে। তিন বেলা শুধু মোটা চালের তিন থালা ভাতের গন্ধ নেয়ায় দিন তিনশো থেকে পাঁচশ টাকায় যারা সম্ভ্রম বিলায় তারা প্রস্টিটিউট নয় । এই সমাজ তাদের নামের আগে এই শব্দ জুড়ে দিয়েছে। কারণ যে মানুষটার এই ২০২২ সালে এসেও দিন পাঁচশ টাকা হলে ৪/৫ জনের একটা পরিবার দিব্যি খেয়ে পরে হাসিমুখে বাঁচে। সমাজের বিত্তবানরা তাদের দিকে ফিরেও তাকায় না। কিন্তু দিব্যি-এক ঘণ্টা-এক রাতের বিনোদনের জন্য লক্ষ লক্ষ টাকা তাদের পেছনে খরচ করে যারা সন্ধ্যা নামার সাথে সাথেই কালো গ্লাসের গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পরেন শহরের নামি দামী পয়সাওয়ালাদের ঝাড় বাতি হতে। যতদিন সমাজ থেকে এই ঝাড় বাতির মিছিল দূরীকরণ না হবে ততদিন এই সমাজ অর্ধ বিকলাঙ্গই রয়ে যাবে। প্রস্টিটিউট নাম বহনকারী একজন নারীর জীবন ঠিক কতটা নিখুঁত পরিচ্ছন্ন কঠিন হতে পারে তা নিজ চোখে অবলোকন না করলে বোঝানো যাবে না। যে দেশে এক কেজি সরু চালের দাম ৯০ টাকা থেকে ১০০ টাকা। সেই দেশে এখনো ৭০-৮০ টাকার বিনিময়ে পতিতালয়ে একজন নারীর শরীর পাওয়া যায়।
এই লজ্জা কার ?????
"ডাইনী' আর 'ডাইনী পুনরাগমন' পাঠকের মনে নানা প্রশ্নের উদ্রেক করেছিল।
'ডাইনী', যেখানে অজ্ঞাতনামা এক লাশের সাথে পাওয়া ডায়েরিতে মৃত ব্যক্তি নিজেকে ডাইনী বলে দাবি করে। চিরযৌবন আর অমরত্ব ধরে রাখতে ডাইনীদের এক বিশেষ ধরণের 'তামালিক' পুরুষদের সাথে যৌন সম্পর্ক তৈরী করতে হয়। ডাইনীরা তামালিক পুরুষের প্রাণশক্তি নিজের মধ্যে ধারণ করে নেয় ফলে অকালে মৃত্যু হয় তামালিকের। ডাইনীদের মাঝে মানবিক অনুভূতি অনুপস্থিত থাকলেও মানব মনের অব্যক্ত গোপন কথা জেনে, মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করার নিষিদ্ধ আনন্দ পায়। তবে এরা যদি সত্যি সত্যি কাউকে ভালোবেসে সন্তান ধারণ করে, তবে তাদের ডাইনী শক্তি নিঃশেষ হয়। শেষ পর্যন্ত গল্পের ডাইনী নিজেকে সংযত করতে পারে না, ডাইনী থেকে পরিণত হয় এক সাধারণ মানবীতে, রেখে যায় উত্তরসূরিকে । কিন্তু কোথায় সে ?
সিরিজের পরবর্তী বই 'ডাইনী পুনরাগমন' এ শাহানা নামের মেয়েটি নিজের অলীক শক্তি আবিষ্কার করে । ডাইনী শক্তি ব্যবহার করে নিজের সাথে হওয়া ঘোরতর অন্যায়ের প্রতিশোধ নেয় সে। এই যাত্রায় তার সাথে পরিচয় হয় জীবনের প্রথম তামালিক পুরুষ লেখক আনোয়ার সাদাতের। গল্পের শেষে শাহানা লেখকের জন্য একটি রেস্টুরেন্টে অপেক্ষা করতে থাকে। শাহানা জানে না লেখক তার সাথে দেখা করতে আসবে কিনা। পাঠকের মনেও প্রশ্ন তৈরী হয়, আনোয়ার সাদাত কি এসেছিল ডাইনী শাহানার পাতা জালে আটকে যেতে?
সিরিজের শেষ বই 'ডাইনী সমাপ্তি' তে পাঠকের সব কৌতূহল মেটানোর চেষ্টা করা হয়েছে। কোথায় তবে শাহানার গন্তব্য? ডাইনী শক্তি বলে আসলেই কি কিছু আছে? থাকলে তার উৎস কোথায় ?
ডাইনী জীবনের পরবর্তী উত্তেজনাপূর্ণ যাত্রার সহযাত্রী হওয়ার আমন্ত্রণ রইলো 'ডাইনী সমাপ্তি' তে। ('ডাইনী সমাপ্তি' পড়ার আগে 'ডাইনী' এবং 'ডাইনী পুনরাগমন' পড়া থাকলে এই বইটি
পাঠকের জন্য বেশি উপভোগ্য হবে বলে আমার বিশ্বাস)"
'আমার যে একটা বিয়ে হয়েছিল, এই পরিচয়টা কি কখনো মুছে ফেলা যাবে? যাবে না।' ‘আজাদ বলল, ‘জীবনভর ভুল মানুষের কারণে আমাদের জীবনে অসংখ্য ভুল হয়। সেই ভুল থেকে ক্ষত তৈরি হয়। কিন্তু সময় সেই ক্ষত ক্রমশই মুছে দিতে থাকে। আর আমরা যারা বোকা তারাই কেবল সেই ক্ষতগুলো খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে আবার দগদগে ঘায়ে রূপান্তরিত করি। তাকে শুকাতে দেই না।’ ‘কিন্তু সময় যদি কারো ক্ষত শুকিয়ে দিতে না পারে? যদি তা দুঃসহ স্মৃতি হয়েই থেকে যায়?’ ‘তাহলে সেটি মোছার ব্যবস্থা করতে হবে।’ ‘কীভাবে মুছব?’ ‘অনেক অনেক ভালো স্মৃতি তৈরি করে। ঘরের দেয়ালে নোনা ধরলে কিংবা পলেস্তরা খসে গেলে আমরা কী করি? তেমনই রেখে দেই? যাতে ধীরে ধীরে পুরো বাড়িটাই নষ্ট হয়ে যায়?’ ‘উহু। ‘তাহলে? আমরা তাকে ধুয়ে মুছে নতুন রঙ করি। যাতে সেই নোনা ধরা দেয়াল ঝলমলে হয়। নষ্ট হয়ে না যায়। জীবনও তেমনই। এখানেও এর দেয়ালজুড়ে অসংখ্য ক্ষত তৈরি হয়, নোনা ধরে। সেসব ধুয়ে মুছে নতুন রঙ না করলে তা আরও বাড়ে। বাড়তেই থাকে। তারপর নষ্ট করে ফেলে পুরো জীবনটাই। ‘ঘরের দেয়াল রঙ করা যায়, জীবনের না। কারণ, জীবনের রঙ কোথাও কিনতে পাওয়া যায় না।’ ‘যায়। কিন্তু আমরা তা কিনতে জানি না।’ ‘কীভাবে? ‘জীবনের রঙ হলো ভালো মুহূর্ত, সুন্দর স্মৃতি। দ্যা বিউটিফুল মোমেন্ট অ্যান্ড দ্যা বিউটিফুল মেমোরিজ। তুমি জীবন জুড়ে যত বেশি ভালো স্মৃতি তৈরি করতে পারবে, তত বেশি ওই নোনা ধরা খারাপ মেমোরিজগুলো ঝাপসা হয়ে যেতে থাকবে। ক্ষতগুলো শুকিয়ে যেতে থাকবে।’
নিজের বৃত্ত থেকে বের হওয়ার অর্থহীন চেষ্টা নিরন্তর করে যায় মানুষ। যদিও দিন শেষে আবার নিজের বৃত্তেই ঘুরপাক খায়, তাতেই স্বস্তি বোধ করে। পুরনো সবকিছুর মায়ার টানে আটকে যায়।
মানুষের মন বড় রহস্যময়। ভুলে যাওয়া ভালোবাসাকেও সে খুব যত্ন করে ঠাঁই দিয়ে রাখে মনের কোনো অচিন কুঠুরিতে। প্রকৃতি মাঝে মাঝে কিছু কিছু বিভ্রান্তিকর দৃশ্য তৈরি করে, যেন মানুষ সুতো কেটে উড়ে যাওয়ার কথা কখনো না
ভাবে। যত দূরেই যাক না কেন, দিন শেষে যেন ফিরে আসে ভালোবাসার মায়াবী সুতোয় জড়িয়ে রাখা সংসারের নাটাইয়ে। আচ্ছা, সব ঘুড়ি কি আদৌ নাটাইয়ে ফিরে আসতে পারে? নাকি কিছু কিছু ঘুড়ি সুতো কেটে উড়ে যায় ওই সুদূর নীলাকাশে? কখনও কখনও কিছু ঘুড়িকে আটকে রাখতে ব্যর্থ হয় নাটাই কিংবা ঘুড়ি নিজেই ব্যর্থ হয় নাটাইয়ের ভালোবাসার টান বুঝতে। কোথায় হয় তাদের ঠিকানা, কোথায় তারা খুঁজে পায় আশ্রয়, সব কি আমরা জানতে পারি?
দুরারোগ্য ক্যানসারে আক্রান্ত ১৭ বছরের তরুণী হ্যাজেল গ্রেস। তবু তার জীবনেও প্রেম আসে, শিশিরের শব্দের মতন। হ্যাজেল কি সফল হবে প্রচণ্ড এই ভালোবাসায়?
হ্যাজেল গ্রেস ল্যাংকাস্টার আর অগাস্টাস ওয়াটার্স নামে দুই তরুণ-তরুণীর গল্প এটি। থাইরয়েড ও ফুসফুসের ক্যানসারে আক্রান্ত হ্যাজেল। পরীক্ষামূলক একটি ওষুধের বদৌলতে বাড়তি কিছুদিনের আয়ু কিনেছে। অন্যদিকে হাড়ের ক্যানসারে আক্রান্ত অগাস্টাস। ইতিমধ্যে একটা পা কেটে ফেলতে হয়েছে তার। ক্যানসারে আক্রান্ত তরুণ-তরুণীদের পরামর্শসেবা দেওয়ার জন্য তৈরি একটি দলের সভায় দেখা হয় তাদের। পদ্মপাতায় শিশিরবিন্দুর মতো অনিশ্চয়তায় ভরা জীবন, মৃত্যু এসে কড়া নাড়তে পারে যেকোনো দিন। তবু প্রেমে পড়ে তারা, পরস্পরের সান্নিধ্যে খোঁজে জীবনের অর্থময়তা। স্বপ্ন ও ভালোবাসা, অসুস্থতা ও মৃত্যু নতুন ব্যঞ্জনা নিয়ে হাজির হয় দুজনের সামনে। ২০১২ সালে প্রকাশের পরই জন গ্রিনের দ্য ফল্ট ইন আওয়ার স্টারস পরিণত হয় বিশ্বব্যাপী বেস্টসেলারে। এ পর্যন্ত আড়াই কোটি কপির বেশি বিক্রি হয়েছে বইটি। অনূদিত হয়েছে অনেকগুলো ভাষায়।
জাহান গিটার রেখে পাশে থাকা ড্রয়ার থেকে সুঁই-সিরিঞ্জ বের করে। তারপর খুব যত্নে, আগলে রাখা প্যাথেডিন এর অ্যাম্পুল ভেঙে তা থেকে পুরনো সিরিঞ্জে তরলটুকুন নেয়। বাঁ পায়ের হাঁটুর নিচের অংশে শিরায় ইনজেকশন পুশ করা হয়। শান্তি। এবার কমবে অস্থিরতা। প্যাথেডিন মনের ব্যাথা কমাবে!
জাহানের রক্তে প্যাথেডিন এর তরল মিশে যেতেই ঘুম ঘুম লাগে তার। শরীর ঘামে। ভাত খাবার পর হাতে তরকারি লেগে থাকলে শুকিয়ে সেটা যেমন কড়কড়ে হয়ে যায় তেমনি আস্ত শরীরটায় এমন কড়কড়ে ভাব টের পাওয়া যায়। বার্বিচুরেটস আর প্যাথেডিন সবচেয়ে বেশি প্রিয় জাহানের। দুশ্চিন্তা চলে গিয়ে ঘুম আসে এতে। একটা আজব মন ভালো করা ক্লান্তির পোকা শরীরজুড়ে ঘুরে বেড়ায়। ভালো লাগে।
জাহান চোখ বন্ধ করে। মায়ের কথা ভুলতে চাইলেও মায়ের মুখটা সবার আগে সামনে চলে আসে। কী মায়া! এই মুখ ভোলা যায়না। নিজের সাথে লড়াই করে জাহান। চোখ বন্ধ করে সব ভুলে যেতে চায়। অথচ চোখের সামনে আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে জালিয়াপাড়া গ্রামটা। অই যে দেখা যায় স্কুলের সামনের ফুটবল মাঠ। ‘পাস দে, পাস দে...।’ বলে চিৎকার করে বন্ধু কৌশিক। পাগলা বৃষ্টির ঝাপটা উপেক্ষা করে গোলপোস্ট এর দিকে দৌড়াতে থাকে জাহান। গোলকীপার এর কাছাকাছি যেতেই ল্যাং মারে কেউ একজন। প্রচন্ড ব্যাথা নিয়ে মাটিতে পড়ে যায় সে। চোখে ঢুকে যায় কাঁদা। সব অন্ধকার। ‘আমার চোখ, চোখ...।’ বলে ব্যাথায় চিৎকার করে ওঠে জাহান। আশেপাশে যেনো কেউ নেই আর। পৃথিবী ডুবে গেছে আঁধার, কালোতে। ঠিক তখনই আবার দৃশ্যপট বদলে যায়। জাহান দেখতে পায় ইকড়ি মিকড়ি রোদের ছাড়ায় তাল গাছ থেকে মাটিতে নেমে আসা তাল নিয়ে বন্ধুদের সাথে ঝগড়ার দৃশ্য। শেষ বিকেলে বাউল শরাফত গেয়ে ওঠে, ‘ও রে, দেহের মরন আছে,/মনের মরন নাই,/আমি অই খাঁটি সোনা মনের দেখা কই পাই-/ কই পাই?’ আর গানের সাথে তাল মিলিয়ে বাজারে হালিম কারিগর ফুলের মতোন সুন্দর পিয়াজু ভাজতে থাকে সন্ধ্যা অবধি। মাগরিবের আযান দিলেই বাড়ি ফেরার তাড়া আছে। তার আগে দীঘিতে ডুব দিয়ে পরিস্কার করে নিতে হবে শরীর। দীঘির নামটি মনে আছে? জলপরানি দীঘি!
বাজার থেকে গুলি ছোড়ার আওয়াজ শোনে রিপা। রমজান মাসের শেষ দিনে রাজ্যের লোক জড়ো হয়েছে অলকী নদীর পাড়ে। সন্ধের মিটমিটে আলো আলো আলো উবু হয়ে শুয়ে আছে নদীর জলে। পনেরো-বিশটা ডিঙি নৌকা ভরতি লোক নদীর মাঝে ঠায় দাঁড়িয়ে হই হুল্লোড় করছে চাঁদ দেখার আনন্দে। নদীর জল ঠেলে বের হয়ে আসছে গোলাকার রুপোলি আয়নার মতো দেখতে চাঁদটা। কাল ইদ। ̄নেশ্বর গ্রামের অধিবাসীদের ইদের চাঁদ এহেন আয়োজন এমনই উৎসবের রেশ ছড়ায় চারপাশে। ইদের আগেই এ আরেক ইদের খুশি। গ্রামের চেয়ারম্যান, মেম্বার থেকে শুরু করে ছেলে বুড়ো প্রায় সবাই চাঁদ দেখার আয়োজনে জড়ো হয়। চাঁদ দেখতে পাওয়ার সাথে সাথে ̄নেশ্বর গ্রামের একমাত্র বাজার জনতার হাট থেকে পরপর আকাশ তাক করে তিনবার গুলি ছোড়া হয়। অন্ধ মানুষও যেন ইদের চাঁদ ওঠার এই আনন্দ টের পায় তাই! রাস্তা পার হবার সময় গন্ধগোকুলটার ওপর চোখ যায় রিপার। বোকা প্রাণীটা বাড়ির পেছন দিককার পানির ট্যাংকির দিকে গিয়ে না ঝামেলা পাকিয়ে ফেলে। চোখ-কান খোলা রাখতে হচ্ছে তাকে কয়েকটা দিন। গন্ধগোকুলটা মাংসের খোঁজ করছে। মাংস ওদিকে আছে তবে মুরগির বাচ্চার মাংস নয় মানুষের বাচ্চার মাংস!
একজন নির্বাসিত তীরন্দাজ। নাম আর্থার। ধনুর্বিদ্যায় পারদর্শী। জানে যুদ্ধের সুকৌশলও। সমুদ্র পথে আপন রাজ্য এন্টালিস ছেড়ে চলে আসে আল্টাটিকে। এদিকে আল্টাটিকের রাজকুমারী এ্যাডেলিনা। রূপে অপরূপা। স্বর্গের অপ্সরা যেন! বলা যেতে পারে স্বর্গের ফুল ফুটে উঠেছে ধুলোবালির এই পৃথিবীতে। অথচ রহস্যময়ী একজন নারী। প্রায় রাতেই একজন করে সুদর্শন পুরুষের সাথে রাত্রিযাপন করে। এবং ভোরের আলো প্রস্ফুটিত হওয়ার আগেই তাকে হত্যা করে ভাসিয়ে দেয় সমুদ্রের জলে! একদিন রাজকুমারী এ্যাডেলিনা মুগ্ধ হয় তীরন্দাজ আর্থারের ধনুর্বিদ্যা দেখে। রাজকুমারীর বুকের অতলে জমতে থাকতে অনুভূতির উষ্ণতা। প্রকৃতির নিয়মে জমজমাট হয়ে উঠে এই দুই মানব-মানবীর প্রেম। অথচ এদের সম্পর্কে পূূর্ণতা আসে না। বিষ কিংবা বিষাদের তীর যেন অষ্টপ্রহর টংঙ্কার তুলে তীব্র গতিতে ধেয়ে আছে মানুষের সম্পর্কের শরীরে...। কিন্তু কেন? তীরন্দাজ এমন একটি উপন্যাস না প্রেমের না যুদ্ধের। উপন্যাসটি মূলত বিশ্বাস কিংবা অবিশ্বাসের।একজন নির্বাসিত তীরন্দাজ। নাম আর্থার। ধনুর্বিদ্যায় পারদর্শী। জানে যুদ্ধের সুকৌশলও। সমুদ্র পথে আপন রাজ্য এন্টালিস ছেড়ে চলে আসে আল্টাটিকে। এদিকে আল্টাটিকের রাজকুমারী এ্যাডেলিনা। রূপে অপরূপা। স্বর্গের অপ্সরা যেন! বলা যেতে পারে স্বর্গের ফুল ফুটে উঠেছে ধুলোবালির এই পৃথিবীতে। অথচ রহস্যময়ী একজন নারী। প্রায় রাতেই একজন করে সুদর্শন পুরুষের সাথে রাত্রিযাপন করে। এবং ভোরের আলো প্রস্ফুটিত হওয়ার আগেই তাকে হত্যা করে ভাসিয়ে দেয় সমুদ্রের জলে! একদিন রাজকুমারী এ্যাডেলিনা মুগ্ধ হয় তীরন্দাজ আর্থারের ধনুর্বিদ্যা দেখে। রাজকুমারীর বুকের অতলে জমতে থাকতে অনুভূতির উষ্ণতা। প্রকৃতির নিয়মে জমজমাট হয়ে উঠে এই দুই মানব-মানবীর প্রেম। অথচ এদের সম্পর্কে পূূর্ণতা আসে না। বিষ কিংবা বিষাদের তীর যেন অষ্টপ্রহর টংঙ্কার তুলে তীব্র গতিতে ধেয়ে আছে মানুষের সম্পর্কের শরীরে...। কিন্তু কেন? তীরন্দাজ এমন একটি উপন্যাস না প্রেমের না যুদ্ধের। উপন্যাসটি মূলত বিশ্বাস কিংবা অবিশ্বাসের।
"সে ডুবে গেল!
মৃত্যুর পর সে ডুবে গেল গভীর কালো এক অন্ধকারে। এই অন্ধকার থেকে মুক্তির উপায় কারো জানা নেই, যে একটু আগে মারা গেছে তার যে কী ভীষণ যন্ত্রণা ছিল কিংবা তার জীবনের সুখের মাত্রাটাইবা কি ছিল; সেটা ও ছাড়া আর কেউ কখনো জানবে না। পৃথিবীর সবটুকু কালো যখন মানুষটাকে নিজের মধ্যে গ্রাস করে নিল তখন সে বুঝল...
বইটা এখানেই শেষ।
শেষ বলতে এর পরের অংশটুকু নেই। চমৎকার একটি উপন্যাসের শেষটুকু নেই। এর কোনো মানে হয়?
তিনদিন হলো আশরাফ উদ্দিন অফিস থেকে ফিরে বইটি পড়ছেন। আজকে শেষ পাতায় এসে বাধ্য হয়ে তাঁকে থামতে হলো। চমৎকার একটি উপন্যাসের শেষের কিছু পাতা না থাকায় তিনি জানতে পারছেন না কী পরিণতি হয়েছে মার্কের, জানতে পারছেন না পাহাড়ের খাদে নতুন যে বাড়িটি বানিয়েছে মার্লিন দম্পতি তাদের কী অবস্থা এখন; অথবা বিটকেল বুড়োটা নদী থেকে ফিরে কী তুলকালাম করেছে। রাখাল ছেলেটা যে সদ্যবিবাহিত মেয়েটির প্রেমে পড়েছে তারইবা কী হবে?"
বিজনের ঘরের প্রতিটা কোনায় তার ছোঁয়া আছে। দেয়ালে ঘড়ির পাশে কাঁপড়ের ডিজাইন করা ওয়ালমেটের দিকে তাকালে তাকে মনে পড়ে। ক্যালেন্ডারের পুরোনো পাতায় লাল, কালো দাগ গুলোও মনে করিয়ে দেয় যে সেই মানুষ টা এই ঘরটায় থাকতো।
কী অদ্ভুত! মানুষ টা নেই, অথচ ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা স্মৃতিগুলো আজও মানুষ টা'কে ভুলতে দেয় না।
এই ভূমিকায় আপনাদের একটা গল্প বলি।
এই এত্তবড় গল্পটার পেছনের গল্প। প্রথম যখন লেখা শুরু করি ‘উপসংহারে তুমি আমি’ তখন গল্পটা এত বড় ছিল না। খুবই ছোট্ট একটা সাধারণ প্লট। দুই মামাতো ফুপাতো ভাই বোনের মধ্যে হওয়া প্রেম-ভালোবাসা ও প্রণয়ের গল্প। আমার অনুমান আমাকে জানিয়েছিল খুব বেশি হলে সাত থেকে দশ পর্বে গল্পটা শেষ হবে। তারপর যখন মনস্থির করে গল্পটা ফেসবুকে দেয়া শুরু করলাম টের পেলাম সেই ছোট্ট গল্পটাই যা আমি তিন ভাগে বিভক্ত করেছিলাম, প্রথম অংশই যেন দশ পর্বে শেষ হয় না।
হামিমার স্বামী হিমেল এসেছে ডাক্তার তরফদারের কাছে। মূল উদ্দেশ্য ডাক্তার তারফদারের পরামর্শ গ্রহণ করা। কারণ তার স্ত্রী মাঝে মাঝে ভয়ংকর স্বপ্ন দেখে। অজানা এক ব্যক্তি একজনের পর একজন মানুষকে খুন করছে। তার স্ত্রীর বিশ্বাস, তার সকল স্বপ্ন সত্য। ডাক্তার তরফদার প্রথমে বিষয়টিকে অবচেতন মনের কল্পনা ভাবলেও পরে অনুধাবন করেন বাস্তবতা আর স্বপ্নের মধ্যে সূ² যোগসূত্র আছে। সেই যোগসূত্র ধরে খুনির পরিচয় উদ্ঘাটন করতে এগিয়ে যেতে থাকেন তিনি। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। হামিমা যে বেরিয়ে গেছে ক্লিনিক থেকে। তাহলে কি সে খুনির ফাঁদে পা দিয়েছে!
ধীরে ধীরে চোখ খুলল হামিমা, এতক্ষণ চোখ বাঁধা ছিল তার। চোখে আলো সয়ে আসতে সময় লাগল কিছুটা। আঁতকে উঠল সামনের মানুষটাকে দেখে। ভয়ংকর সেই সিরিয়াল কিলার যাকে সে স্বপ্নে দেখত! হাতে একটা ছুরি, চকচক করছে। এই ছুরি দিয়েই সে নির্মম নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করে মানুষকে, টুকরো টুকরো করে শরীর। হামিমা বুঝতে পারল মহাবিপদে আছে সে। কারণ নির্জন এক কক্ষে বন্দি সে, কেউ জানে না এই কক্ষের সন্ধান! এজন্য চাইলেও তাকে উদ্ধার করতে পারবে না কেউ। একমাত্র পরিণতি মৃত্যু!
ডাক্তার তরফদার কি শেষ পর্যন্ত রক্ষা করতে পেরেছিলেন হামিমাকে? আর কে ছিল ঐ সিরিয়াল কিলার? নাকি সবার অলক্ষে এখনো সে চালিয়ে যাচ্ছে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ!
লাইটিল নামক নতুন একটি গ্রহে অবতরণ করে অনুসন্ধানী স্পেসশিপ সিসকো। গ্রহটিতে আগে কখনো মানুষ আসেনি। এই প্রথম। কোনো প্রাণীও নেই গ্রহটিতে। অনুসন্ধান করতে গিয়ে অভিযাত্রীরা তিনটি ডিম পায়। একটি থেকে জন্ম নেয় মানুষের মতো দেখতে এক পুরুষ প্রাণী। পুরুষ বাচ্চাটি জন্মের সাথে সাথে মধ্যেই কথা বলতে শুরু করে মানুষের সাথে। নিজের গোত্রের নাম জানায় লালিন, আর তার নাম বলে পাইমান। পাইমানের অবিশ্বাস্য একটা ক্ষমতা রয়েছে, অন্য প্রাণীর মস্তিষ্কপঠন করতে পারে। সবচেয়ে কমবয়সি নারী অভিযাত্রী নিতিনার মস্তিষ্কপঠন করে মানুষের জীবনচক্র, জ্ঞান, প্রযুক্তি, সক্ষমতা সম্পর্কে জেনে যেতে থাকে পাইমান। নিতিনার কাছে নিজের অভিলাষও ব্যক্ত করে সে, তার মূল উদ্দেশ্য নিজের গোত্রের বংশবৃদ্ধি করা। কিন্তু অন্য দুটো ডিম থেকে জন্ম নেওয়া দুই মেয়ে লালিনকে যখন বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হয় না, তখন উদ্ভ্রান্তের মতো হয়ে যায় পাইমান। নিজের বংশরক্ষার জন্য হঠাৎই সে অপহরণ করে নিতিনাকে। নিয়ে যায় পাহাড়ের নিচে নির্জন এক সুড়ঙ্গের মধ্যে। নিতিনা নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে চেষ্টা করেও পারে না। উপলব্ধি করে পাইমানের হাতে বন্দি সে। পাইমানের সন্তান এখন যে তাকে জন্ম দিতেই হবে। কিন্তু মানুষ হয়ে কীভাবে সে অন্য প্রাণীর সন্তান জন্ম দেবে! ভাবতেই মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠে তার! এদিকে ক্যাপ্টেনসহ অন্য অভিযাত্রীরা পাইমানের হাত থেকে নিতিনাকে উদ্ধারের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করতে থাকে। এক সময় তারা বুঝতে পারে ব্যাপারটা এত সহজ নয়! স্বাভাবিক লেসার গান পাইমানের তেমন কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। শেষ পর্যন্ত কী নিতিনাকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছিল? আর কী ঘটেছিল লাইটিল গ্রহের বিস্ময়কর প্রাণী পাইমানের?
"অফিস তো বন্ধ। কাকে চাচ্ছেন?" বিজয় কোনো কথা বলল না। পকেট থেকে রিভলবার বের করল। ঝট করে উঠে দাঁড়ালেন আসলাম হক। উঠতে গিয়ে হোঁচট খেয়ে পড়ে গেলেন। কাঁপছেন থরথর করে। কিছু একটা বলার চেষ্টা করছেন কিন্তু মুখ দিয়ে কোনো শব্দ বের হচ্ছে না। অনেক কষ্টে আসলাম হকের মুখ দিয়ে কথা বের হলো। বললেন, "বাবা তোমার আল্লাহর দোহাই লাগে আমাকে মেরো না। আমি মারা গেলে আমার প্রতিবন্ধী মেয়েটাকে দেখার কেউ নেই।" বিজয় সময় নিয়ে পিস্তলে সাইলেন্সার লাগালো। আস্তে করে কোমল গলায় বলল, "আমি কথা দিচ্ছি চাচা, আপনার কিছু হয়ে গেলে আপনার মেয়েকে আমি দেখব। যতদিন বাঁচি দেখব। আপনি একদম চিন্তা করবেন না। নিশ্চিন্তে বিদায় নেন। আমি আছি!" এই কথায় আসলাম হক খুব একটা ভরসা পেলেন না। উনার দুই চোখে রাজ্যের আতংক এসে ভিড় করল। ট্রিগার চাপলো বিজয়।
একই সাথে সমান অনুভবে দুটি মেয়েকে কি ভালোবাসা সম্ভব?
দিনাজপুরের বিখ্যাত কুয়াশার মতো বিন্তি এসে দাঁড়িয়েছিল ছেলেটির সামনে—ঝাপসা, এলোমেলো আর শীতে আক্রান্ত জবুথবু মন নিয়ে। যে ভ্রুসন্ধিতে পরতো মিহি একটা কালো টিপ আর বুকে জড়াতো হলুদ সরিষা খেতের মতো ওড়না। ছেলেটি সবসময় চেয়েছে দুর্বোধ্য কুয়াশাকে হাত দিয়ে সরিয়ে আসল বিন্তিকে উদ্ধার করতে। কিন্তু যতই সে বিন্তিকে জানতে চেষ্টা করেছে ততই সে ডুবে যেতে থাকে এক গভীর খাদে।
নিজেকে বাঁচাতে স্বার্থপরের মতো রিথির হাত ধরে ছেলেটি। রিথি ওর পশমের মতো কালো শরীরের দীপ্তিময়তায় ছেলেটির সমস্ত কষ্টময় স্মৃতিকে ধুয়ে মুছে ফেলতে চায়। কিন্তু রিথি কি তা পারবে? যদি সে না পারে তার বাড়িয়ে দেওয়া উষ্ণ হাতটির কী হবে?
অপরদিকে একই সাথে দুটি মেয়েকে বুকে ধারণ করে পথ চলা, অনুভবের স্বতন্ত্র অলিগলিতে দুটি মেয়েকে আলাদা আলাদা জায়গা দেওয়া, দুটি শরীরের ভিন্নমাত্রার গন্ধ, ভালোবাসার প্রকরণ, ভিন্ন প্রকার যৌনতার অভিব্যক্তি—পরস্পর পরস্পরের সাথে এমনভাবে মিশে যায় যে সেই তৃতীয়মাত্রার অনুভূতির সাথে ছেলেটি অভ্যস্ত হয়ে যায়। যেন এক ঘোরতর নিবিষ্টতা, অপার্থিব এক নিমজ্জন!
যৌবনের শুরুর এই সিদ্ধান্তগুলো, বয়সের তুলনায় অধিকতর জটিল মানবিক সম্পর্ক, সেগুলোর মিথষ্ক্রিয়া, হাতছানী দিয়ে ডাকা যৌনতা, বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা এবং নিঃসঙ্গতার কষ্ট—সবকিছু অদ্ভুত দক্ষতায় ও কাব্যিক বয়ানে চিত্রিত হয়েছে “উড়ে যাওয়ার দিন” উপন্যাসে।
একটি প্রেম, একটি ধর্ষণ এবং অতঃপর...
গল্পটা মিলির নির্বাসনের।
মারুফের অপ্রাপ্তির।
রিটার অসুখের।
তন্ময়ের ভালোবাসার।
অ্যানির উচ্চবিলাসিতার।
রাকিবের লিপ্সার।
আর...
সময়টা অস্থির। তার নিজেরই কোনো গন্তব্য নেই। মানুষগুলোরও সেই দশা। তবে এদের মধ্যে কেউ কেউ মনে করে তারা গন্তব্যটা জানে। তাই ছুটে চলে। আবার কেউ কেউ মনে করে তারা খুঁজে পেয়েছে অনেকদিন পর। তারাও ছুটে যায়। কিন্তু আদতে কিছু মানুষ হয় সমুদ্রের মতো। তাদের বুকে উত্তাল ঢেউ। সেই ঢেউ তাদের বুকে জমা ইচ্ছে, স্বপ্ন, মানুষদের ছিটকে ফেলে। কখনও সামুদ্রিক ঝড়ের মতো অস্থির তারা, আবার কখনও ঝড়ের পর শান্ত প্রকৃতির মতো স্নিগ্ধ। এই উপন্যাসের মূল চরিত্র বেলাও তেমন।
কভিড-১৯ এই পৃথিবীতে নানা পরিবর্তন এনেছে। এর সবকিছু এখনও দৃশ্যমান না। কভিড যে আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত সম্পর্কগুলোর ক্ষেত্রেও প্রভাব ফেলেছে তাতে সন্দেহ নেই। আমাদের প্রতিদিনকার যাপিত জীবন থেকে শুরু করে বিশ্বাস, আদর্শকেও প্রভাবিত করেছে মহামারি। কেউ মানিয়ে নিতে পারছে, কেউ পারছে না। কভিডের আগের জীবন আর পরের জীবন সম্পূর্ণ আলাদা। সেই বদলে যাওয়া জীবন নিয়েই এ বইয়ের গল্প।
সে গল্পের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে এক নারীর জীবন। কিংবা তার জীবনের কথাই ‘বেলাভূমি’র মূল গল্প। এ কালের এক নারীর বেড়ে ওঠা থেকে শুরু করে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার প্রাথমিক পর্যায়ের গল্প বলে বেলাভূমি। তার জীবনের সঙ্গে মিশে থাকে সমাজের, সময়ের কিছু নিয়ম, আদর্শ, যাপিত জীবনের রীতি আর সেই রীতি ভাঙার ইচ্ছে। তাকে কখনো সাহায্য করে কভিড-পরবর্তী সময়। কখনো প্রশ্ন করে পুরোনো সম্পর্ক। আর নিয়মের নিগড়ে থেকে নিয়ম-ভাঙা সে নারী সমুদ্রের নোনাজলের মতো আছড়ে পড়ার জন্য খোঁজে এক টুকরো আশ্রয়।
"কেউ কী কখনো নিজের দোষে খারাপ হয়? নাকি অবস্থা, পরিবেশ ইত্যাদি মানুষকে খারাপ করে? একজন স্বাভাবিক ব্যক্তিকে আমার আপনার মত আশপাশের মানুষই যদি তার বিশ্বাস থেকে তুলে নিয়ে আসে; তাহলে খারাপটা কে হলো? সে নাকি আমরা?
দোষ দিতে চাইলে সবাইকেই দেওয়া যায়। কিন্তু তা কতখানি যৌক্তিক?"
লাভ লেন শব্দ দুটি ব্রিটিশদের দেওয়া। এই লাভ লেনের একটি বাড়ি ঘিরে উপন্যাসটির কাহিনিবৃত্ত। মানুষের জীবনে প্রেম মহার্ঘ। তারপরও কেন নর-নারীকে অপ্রেমের সঙ্গে জীবন কাটাতে হয়? এই প্রশ্নটির উত্তর খোঁজা হয়েছে এই উপন্যাসে। নাম দেখে মনে হবে, এ বুঝি এক প্রেমের উপন্যাস। আসলে এটি এক অপ্রেমের বৃত্তান্ত। বাদামি-জীবন আমাদের। এক খোসার ভেতর দুটো আলাদা ঘরে দুটো বাদাম। আমাদের দাম্পত্যজীবনও ঠিক বাদামের মতন। এক ঘরে এক বিছানায় শুয়েও আলাদা জীবন আমাদের। কাকে যেন পাওয়ার ছিল, কে যেন অধরা থেকে গেল! তিশা সিরাজের সঙ্গে ঘর বাঁধতে চেয়েছিল, পারেনি। লম্বা বেঢপ চেহারার নিখিল ভৌমিকের সঙ্গে রূপসী তিশাকে সংসার করতে হলো। ভালোবেসে বিয়ে করেছিল জয়দীপ। দাম্পত্যজীবনটা সুখকর ছিল না। এই উপন্যাসের শরীরজুড়ে না পাওয়ার ক্ষতচিহ্ন। স্নিগ্ধমধুর এক স্বপ্ন শেষ পর্যন্ত বেঁচে থাকে ‘১৬/১৭ লাভ লেনে’।